বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ম্যাচে গ্যালারির এক দর্শকের দিকে ব্যাট হাতে তেড়ে গিয়েছিলেন তামিম

ক্রিকেটের অনুশীলনে প্রায়ই তিনি মেতে ওঠেন ফুটবল নিয়ে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের খোঁজখবর তাঁর নখদর্পণে। মোদ্দাকথা, ক্রিকেটার হলেও ফুটবল তাঁর ভীষণ পছন্দ। মারিও বালোতেল্লি কি তামিম ইকবালের পছন্দের তালিকায় আছেন? হয়তো-বা। নইলে ঠিক বালোতেল্লির মতোই মাঠের বাইরের ঘটনায় বারবার কেন খবরে আসবেন তামিম!
ক্যারিয়ারগ্রাফে অমন ঘটনার তালিকা বেশ দীর্ঘ। বিতর্ক অক্টোপাসের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে যেন জড়িয়ে রেখেছে তামিমকে। সর্বশেষ উদাহরণ খুলনায়। বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ম্যাচে গ্যালারির এক দর্শকের দিকে ব্যাট হাতে তেড়ে গিয়েছিলেন তামিম। সেই ব্যাট দিয়ে বাড়ি মারার হুমকির পাশাপাশি অশ্রাব্য গালিগালাজও করেছেন তিনি। ক্যামেরায় ধারণকৃত ওই দৃশ্য ফেসবুকের সৌজন্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। আর দুরন্ত রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের কাছ থেকেও তিরস্কার জুটেছে তামিমের কপালে।
ঘটনাটি ২২ জানুয়ারির। ঢাকা গ্লাডিয়েটরসের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিং করে বেরিয়ে আসছিলেন তামিম। ফেসবুকে থাকা ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সিঁড়ি দিয়ে উঠে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে গ্যালারিতে কিছু দর্শকের হই-হল্লা। নারীকণ্ঠের এক সমর্থকের আবদার, 'তামিম ভাইয়া'। হঠাৎই তামিম ব্যাট হাতে গ্যালারির দিকে ছুটে গিয়ে দেন হুমকি, 'একবারে ব্যাট দিয়া বাড়ি মারমু, মা... (ছাপার অযোগ্য গালি)। চোপ।' এরপর গট-গট করে হেঁটে চলে যান তিনি।
ঘটনার শেষ এখানে হয়নি। তামিমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা এক তরুণকে ধরে নিয়ে আসেন বিসিবির নিরাপত্তা উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) মেজবাউদ্দিন সেরনিয়াবাতের কক্ষে। সেখানে অভিযুক্ত তরুণ নিজেকে কেবল নির্দোষই দাবি করেননি, দাবি করেছেন তামিমের বড় ভক্ত হিসেবে। সেরনিয়াবাত নিজেই বলেছেন তা, 'ওই তরুণ নাকি তামিমকে বলেছিলেন, আরো সময় ধরে ব্যাটিং করলে ম্যাচটি দুরন্ত রাজশাহী জিততে পারত। কিন্তু তামিম নাকি সেটিকে ভুল বুঝে মনে করেছিলেন তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে। সে কারণে পাল্টা গালি দিয়ে ব্যাট হাতে তেড়ে গেছে সে। আসলে দলের অবস্থা ভালো ছিল না বলে হয়তো তামিমের মেজাজ ঠিক ছিল না। তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে এমনটা করা তার উচিত হয়নি।'
তামিম ইকবালের কিন্তু দাবি উল্টো। কোনো তরুণীকে গালি দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও ওই দর্শক যে তাঁকে গালি দিয়েছেন, সে বিষয়ে নিঃসংশয় তিনি। তামিম তেমনটাই দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন দুরন্ত রাজশাহীর মিডিয়া ম্যানেজার আহমেদ রাকিব, 'তামিম বলেছে যে, তাঁর বাপ-মা তুলে গালি দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই তিনি অমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এটি খুব বড় ব্যাপার নয়।'
মিডিয়া ম্যানেজার যত 'ছোট' ভাবছেন, দুরন্ত রাজশাহী কর্তৃপক্ষ কিন্তু মোটেই তত সহজভাবে ব্যাপারটি নিচ্ছেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক মুশফিকুর রহমান তো দেখিয়েছেন তীব্র প্রতিক্রিয়া, 'খুলনা স্টেডিয়ামে তামিম যে ঘটনা ঘটিয়েছে, সে জন্য প্রচণ্ড ঘৃণা প্রকাশ করছি। এটি চরম দুঃখজনক একটি ব্যাপার। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের মাথায় রাখা উচিত, ভক্ত-দর্শকদের ভালোবাসাই তাঁদের তারকা বানিয়েছে। কাজেই দর্শকদের নানারকম আবদারে তাঁদের আরো বেশি সহিষ্ণু হওয়া প্রয়োজন।' এ ধরনের ঘটনায় বিসিবির হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করছেন মুশফিক, 'ঘটনার পরপরই আমি তাকে সতর্ক করেছি। সেও ব্যক্তিগতভাবে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। আমি মনে করি, এ জাতীয় ঘটনায় বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটির কঠোর ভূমিকা নেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে খেলোয়াড়রা সতর্ক হয়ে যায়।'
তামিমকে ঘিরে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। একবার চিকিৎসার প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য বিমানের বিজনেস ক্লাস না দিয়ে ইকোনমি ক্লাসের টিকিট দেওয়া হলে ভিসা ফর্ম ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। ইনজ্যুরড অবস্থায় আন্তর্জাতিক সিরিজ চলাকালে স্কোয়াডে না থেকেও ড্রেসিংরুমে প্রবেশের অ্যাক্রিডিটেশনের জন্য করেছিলেন হম্বিতম্বি। বিপিএলে গতবার চিটাগাং কিংস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলায় সুস্থ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে খেলানো হয়নি। ভারতীয় টিভির স্টিং অপারেশনে তামিম 'হুন্ডি' করে বিদেশে টাকা নিয়ে যান বলে জানিয়েছিলেন তাঁর এজেন্ট। এ রকম আরো অগুনতি ঘটনা আছে তামিমের ক্যারিয়ারে।
খুলনার সর্বশেষ ঘটনায় তামিমের সেই কলঙ্ক আরেকটু বাড়ল কেবল!