ক্ষুব্ধ অস্ট্রেলিয়া, সতর্ক বাংলাদেশ

অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘদিনের রাজত্ব শেষ হয়েছে ঠিক শুরুর বিন্দুটিতে এসে। যে পাকিস্তানকে দিয়ে শুরু করেছিল তারা সেই পাকিস্তানই থামিয়ে দিল অসিদের। এরপর ভারতের কাছে ৫ উইকেটে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। এশিয়ানরাই অস্ট্রেলিয়ার জয় রথ থামিয়ে দিয়েছে। এশিয়ানদের বিপক্ষে মাইকেল ক্লার্কের ক্ষোভ তো জন্ম নিতেই পারে। বাংলাদেশের মাটিতে সেই ক্ষোভ কি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন অসি অধিনায়ক? কিছুদিন আগে অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিলেন রিকি পন্টিং। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬-১ ব্যবধানে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন ক্লার্ক। যেন ইট মারার পর পাটকেল খাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। পন্টিংয়ের ইচ্ছেটাই পূরণ করেছিলেন ক্লার্ক? অস্ট্রেলিয়াকে অনেকদিন নেতৃত্ব দিলেন পন্টিং। ১৯৯৫ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে পন্টিং প্রায় দেড় যুগ ক্রিকেট বিশ্বে চালিয়েছেন তার রাজত্ব। কখনো শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে। আবার কখনো অধিনায়ক হিসেবে। পন্টিং অধিনায়কত্ব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেই বিদায় নিলেন এবার। বরং বলা যায় তাকে অব্যাহতি দিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। এবার কি মাইকেল ক্লার্ক যুগের শুরু? বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ঢাকায় উপস্থিত ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। এশিয়ার কাছ থেকে বিশ্বকাপে আঘাত পেয়ে অসিরা এখন আহত ব্যাঘ্রের মতোই! ঢাকায় কি তারই প্রতিফলন দেখা যাবে? মাইকেল ক্লার্ক এক নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত দিচ্ছেন অসি ক্রিকেটের। সেই নতুন দিগন্ত কি বাংলাদেশ থেকেই উন্মোচন করতে চান তিনি? সতর্কই থাকতে হবে সাকিবদের। আহত অস্ট্রেলিয়ার ভয়ঙ্কর ক্রিকেটের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রস্তুত করেই মাঠে নামতে হবে টাইগারদের। আর যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৫৮ রান) কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা (৭৮ রান) ঘটনার মতো বিপর্যয় না ঘটে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর অস্ট্রেলিয়া!কিন্তু বাংলাদেশেরও যে কিছু করার আছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের জয় পরাজয়ের অনুপাত প্রায় সমান। ৩৮ ম্যাচের ১৮টিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই মাঠে বাংলাদেশকে পয়মন্ত হিসেবেই দেখা হতো এতদিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি 'মাসাকার' হওয়ার পর এখন ফিরে আসার দাবি জানাতেই পারে তারা। পয়মন্ত মাঠটিকে আগের অবস্থানে নিয়ে আসাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লক্ষ্য। গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে তাই জানালেন বিশ্বকাপ দলে থাকা শাহরিয়ার নাফিস। তিনি বলেন, 'অস্ট্রেলিয়া দলটি নতুন তারকা দিয়ে ভরপুর। তাদের বিরুদ্ধে খেলা কঠিন হলেও আমাদের সেরা ক্রিকেটটাই আমরা খেলব।' সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরও একটি কারণে খেলা সহজ হবে বলে মনে করেন নাফিস। বর্তমান অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের চাওয়ার পূর্ণ করতে পারেনি। সে কারণে তারাই চাপে থাকবে। সেই চাপ থেকে বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারবে বলে মনে করেন শাহরিয়ার নাফিস।বাংলাদেশ দল কতটুকু সুবিধা পাবে তার চেয়েও বড় কথা হয়ে উঠছে মিরপুরের উইকেট কতটা সহায়তা দিবে টাইগারদের? বিশ্বকাপে নিজেকে একেবারেই মেলে ধরেনি মিরপুর। যেমনটি দেখা গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। দেখা গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেও। সেই মিরপুর কি এবারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও নিজেকে মেলে ধরবে না টাইগারদের জন্য?অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক কার্ডিফ স্মৃতি নিয়েই এখনো হেসে ওঠেন ভক্তরা। মিরপুর নিয়েও হেসে ওঠার উপলক্ষ এবারই সৃষ্টি করে দিতে পারেন সাকিবরা। শাহরিয়ার নাফিসের কণ্ঠে কি সেই সুরই শোনা গেল না? 'আমাদের বিশ্ব সেরা তিন জন স্পিনার আছে। যারা যে কোনো সময়ই দলকে বৃহৎ বিজয় উপহার দিতে পারেন।' সাকিবদের অতীত বলে শাহরিয়ার নাফিসের কথা মিথ্যে নয়। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের দলকে বিজয় উপহার দেওয়ার প্রত্যাশায়ই থাকবেন তারা। এমন অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরাও। তবে টাইগারদেরকে সতর্কতার মধ্য দিয়েই খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে।