তামিম দেখছেন অন্য বাংলাদেশ !

এক লাখ টাকা বাজি! তামিম ইকবালের ৩ ওভারে ১৫ রান নিতে হবে রুবেল হোসেনকে। রুবেল কি পারবেন?আরও একটা বাজি। এটাও এক লাখ টাকার। তামিম বলছেন, ইংল্যান্ড দলে ক্রিস ট্রেমলেট আছেন। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ কর্মকর্তা হিসেবে থাকা সাবেক ক্রিকেটার সাইদুল ইসলাম (এফি) বলছেন, নেই। কে জিতবেন এই বাজিতে?প্রথম বাজিটা জিতলেন তামিম। শেষ বলে ১ রান দরকার ছিল। রুবেল ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে বলে তো ব্যাট লাগাতে পারলেনই না, আম্পায়ার সাকিব আল হাসানের সিদ্ধান্তে হয়ে গেলেন স্টাম্পড! পরের বাজিটার ফলাফল নির্ধারণ শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ল চরম বিতর্কিত। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে ট্রেমলেট আছেন, তবে আছেন ১৬তম ক্রিকেটার হিসেবে। তামিমের দাবি, স্ট্যান্ডবাই হিসেবে থাকলেও দলের সঙ্গে তো আছেন ট্রেমলেট। সাইদুলের যুক্তি, ‘ও তো স্ট্যান্ডবাই! দলের সঙ্গে থাকল কী করে?’মজার এসব বাজিটাজি ঘামঝরানো অনুশীলনের ফাঁকে নির্মল বিনোদনেরই বিষয়। নইলে ঘরের মাঠে তামিমের আসল বাজিটা তো ১১ মার্চ! আগের ম্যাচের কলঙ্ক ঘোচানোর তাড়না আছে, আছে চট্টগ্রামবাসীকে বিশ্বকাপে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ। কেউ যদি বলেন, ইংল্যান্ড ম্যাচের জন্য তামিম এখন অধীর অপেক্ষায় আছেন, খুব কি ভুল বলা হবে?চট্টগ্রামে ইংল্যান্ড বনাম তামিম আবহ দেখেই হয়তো ভারতীয় এক সাংবাদিকের মনে হলো, বাংলাদেশের বাঁহাতি এই ওপেনারের প্রিয় প্রতিপক্ষ বুঝি ইংলিশরা। কথাটা পাড়তেই প্রতিবাদ, ‘না না, আমার বরং ভারতের বিপক্ষেই খেলতে ভালো লাগে।’ ১১ মার্চের ম্যাচ এই প্রস্তাবনার বদল ঘটাতে পারে। চট্টগ্রামের মাঠে এখন পর্যন্ত একটাও সেঞ্চুরি নেই, বিশ্বকাপে সেই অধরাকে ধরার লক্ষ্য তামিমের। লক্ষ্যটা পরের ম্যাচেই পূরণ হয়ে গেলে স্মৃতির মণিকোঠায় ইংল্যান্ডও নিশ্চয়ই আলাদা মর্যাদা পাবে।চট্টগ্রামে খেলতে এলেই একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। নিজের মাঠ, গ্যালারিতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবেরা বসে...প্রত্যাশার চাপটা জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসবে না তো তামিমের ঘাড়ে? এসব আলোচনা ব্যাট দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারলেই খুশি হতে পারেন তামিম। সেটা যখন সম্ভব নয়, মুখেই বললেন, ‘বাড়তি কোনো চাপের প্রশ্নই ওঠে না; চট্টগ্রামে খেলাটা বরং উপভোগ করি।’ বিশ্বকাপ সেই উপভোগে চড়াচ্ছে নতুন রং, ‘নিজের মাঠে বিশ্বকাপ খেলব...অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে। আমার জন্য এবং চট্টগ্রামবাসীর জন্যও এটা অনেক বড় ব্যাপার। আশা করি, বিশ্বকাপ চট্টগ্রামকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’বিশ্বকাপের আয়োজন অনেকটাই বদলে দিয়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের চেহারা। মূল ফটক থেকে মাঠ, গ্যালারি—প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে সেজে উঠেছে সবই। এখন শুধু মাঠের উৎসবটা হলেই চট্টগ্রামের বিশ্বকাপ সার্থক হয়। তামিম আশা জাগালেন, ‘গত ম্যাচে কী হয়েছে, তা আমরা ভুলে যেতে চাইছি। আমি নিশ্চিত, কেউই আর আগের ম্যাচটার কথা ভাবছে না। এখন সবাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে। এখন দলের মানসিক অবস্থা খুবই ভালো। ১১ মার্চ বিশেষ কিছু করতে চাইছে সবাই।’ইংল্যান্ডের জন্য এবারের বিশ্বকাপটা যেন খানাখন্দে ভরা। আজ টাই তো কাল হার, একটা ম্যাচ জিতলেও তো সেটা হারতে হারতে জেতা! তার ওপর বাংলাদেশে আসার আগে হারাতে হয়েছে কেভিন পিটারসেনকে। নিজের মাঠে এমন ইংল্যান্ডকে পেলে কে না খুশি হবে! তবে তামিম বলছেন, ‘কেভিন বিশ্বমানের খেলোয়াড়। সে না থাকলে একদিক দিয়ে ভালোই হবে। অবশ্য, এসব নিয়ে না ভেবে আমরা নিজেদের খেলায় মনোযোগ দিতে চাই। নিজেদের কাজ ঠিকভাবে করতে পারলে বিশ্বের যেকোনো দলকেই যেকোনো সময় হারানো সম্ভব। কার বিপক্ষে খেলছি, সেটি কোনো ব্যাপার নয়; আমরা কেমন খেলছি, সেটাই আসল।’আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও এবারের বিশ্বকাপের স্বাদ বাংলাদেশের কাছে এখন পর্যন্ত তিক্তই। পরের তিনটা ম্যাচের অন্তত দুটিতে জিতলে যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টিকে থাকার সম্ভাবনা থাকে, সেটা সবাই জানে। কিন্তু এই সম্ভাবনা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটাই প্রশ্ন। তবে তামিম আশাবাদী, ‘এটা ঠিক, কোনো কিছুই আমাদের পক্ষে যাচ্ছে না। তবে একটা ভালো ম্যাচই সব বদলে দিতে পারে। আপনারা তখন অন্য বাংলাদেশকেই দেখবেন।’নিজের মাঠের সবুজ ক্যানভাসে কি সেই বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারবেন তামিম? 
সুত্র : প্রথম আলো