বাজিকরদের সঙ্গে যোগাযোগ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও!

বিপিএল শুরুর আগে স্পট ফিক্সিং বোমা ফাটিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেমিফাইনাল 'কাণ্ডের' পর চিটাগাং কিংসের মালিকপক্ষের দাবি পুরো বিপিএলই 'জুয়ার আসর'। মাঝের সময়টা পাকিস্তানি বাজিকর সাজিদ খানের গ্রেপ্তার মিলিয়ে বিপিএল বন্দি আছে সন্দেহের তালিকায়। গতকাল ব্রিটিশ দৈনিক সানডে টাইমস ফাটিয়েছে ক্রিকেটে আণবিক বোমা! বিপিএল তো বটেই, আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদেরও! এ ব্যাপারে এখনই মন্তব্য করতে রাজি হননি বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। তবে আইসিসির নির্দেশনা মেনে পরবর্তী মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটেও 'নজরদারি' করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিপিএলকে ঢালাওভাবে জুয়ার আসর বলতে অস্বীকৃতি আগেই জানিয়েছে বিসিবি। তবে জুয়াড়ির 'অনুপ্রবেশ' যে ঘটেছিল, তার প্রমাণ তো সাজিদ খানের গ্রেপ্তারের ঘটনা। গ্রেপ্তারের পর নিজের অপতৎপরতার কথাও তদন্তকারী সংস্থাকে নাকি জানিয়েছেন সাজিদ। তবে এরপর এ জুয়াড়ি কিংবা তদন্তের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানেন না নিজামউদ্দিন চৌধুরী, 'বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। তবে উনাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিসিবি যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।' এদিকে বিসিবির অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষ এবং তার প্রতিবেদনও তৈরি বলে জানিয়েছেন নিজামউদ্দিন, 'সে রিপোর্ট বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে।' তবে পরবর্তী বোর্ড সভার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। আপাত সমাধান হিসেবে আগামী বছর ঘরোয়া ক্রিকেট এবং অবশ্যই বিপিএলে নজরদারি বাড়ানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী, 'আইসিসি থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটেও নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর বিপিএলের পরবর্তী আসরে আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন ইউনিটকে (আকসু) যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।'

আইসিসির নির্দেশনায় ঘরোয়া ক্রিকেটও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ ইংলিশ কাউন্টি। এসেঙ্রে পেসার মারভিন ওয়েস্টফিল্ড ইংলিশ জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন। কিন্তু বাজিকরদের অর্থের প্রলোভনটা এমনই যে ২০০৯ সালে ডারহামের বিপক্ষে ৪০ ওভারের ম্যাচে টোপটা গিলে ফেলেন এ তরুণ। প্রথম ওভারে ১২ রান দেওয়ার বিনিময়ে ছয় হাজার পাউন্ড (সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা) কামিয়ে নেওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে এখন জেলে ওয়েস্টফিল্ড। কোনো খেলোয়াড় যদি ম্যাচের ফল সম্পর্কে আগাম নিশ্চয়তা দিতে পারেন, তাহলে সাড়ে সাত লাখ পাউন্ড দিতে প্রস্তুত জুয়াড়ি। সানডে টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বাজিকরের ভাষ্যমতে শুধু খেলোয়াড়ই নন, একই প্রস্তাব থাকে কর্মকর্তাদের জন্যও। তার মানে চিটাগং কিংসের কর্ণধার সামির কিউ চৌধুরী তো সেদিন বাড়িয়ে বলেননি, 'আমাকে তিনবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।' আর সাজিদ খান গ্রেপ্তার হলেও সামিরের কাছে প্রস্তাবই এসেছিল ভারতীয় ফোন নম্বর থেকে।' ব্রিটিশ দৈনিকটির প্রতিবেদনের সূত্রও এক ভারতীয় বাজিকর। পরিচয় আড়াল করে যে বাজিকরের ভিডিও ভাষ্য নিয়েছেন সানডে টাইমসের প্রতিবেদক, সেই তিনি দিলি্লবাসী ভিকি শেঠ। সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালদের কাছেও প্রস্তাব এসেছিল ভারতীয় বাজিকরদের পক্ষ থেকে।

ক্রিকেট জুয়ার খাতা থেকে বাংলাদেশি কোনো ক্রিকেটারের নাম এখনো প্রকাশ্য হয়নি। তবে জুয়াড়িদের নির্দেশ মেনে যদি রানের গতি কমিয়েই ৫৭ লাখ টাকা উপার্জন করা যায়, যদি বেশি রান দিয়ে কোনো বোলারের সামনে ৬৫ লাখ টাকার থলে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়? ভিকি শেঠ গোপন ক্যামেরার সামনে ক্রিকেট জুয়ার এমন লোভনীয় প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন সানডে টাইমসকে। এর চেয়েও ভয়ংকর তথ্য দিয়েছেন ভিকি শেঠ। স্পট ফিক্সিং কিংবা ম্যাচ পাতানোয় বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তাঁদের। সেসব দেশের তালিকায় ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশও আছে!

বিসিবির নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মকর্তা আছেন। সে সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটে নজরদারি থেকে শুরুর পাশাপাশি ক্রিকেটারদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরই আপাতত সমাধান খুঁজছেন নিজামউদ্দিন চৌধুরী, 'নজরদারির পাশাপাশি এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব খেলোয়াড়দের সচেতন করে তুলতে হবে।' এ নজরদারিতে কতটা কী সুফল মিলছে, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ সেই হান্সি ক্রনিয়ে থেকে শুরু করে বিপিএলে বাজিকরদের কারসাজির খবর বেরিয়েছে সংবাদমাধ্যম, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা সংশ্লিষ্ট দলের সহায়তায়। আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের তৎপরতা দেখা গেছে শুধু ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরই। আর সচেতনতা কিংবা সততার শিক্ষাটা শৈশবেই পেয়ে থাকবেন মারভিন ওয়েস্টফিল্ড। তবু তো...।

আর যাঁরা যেনতেনভাবে একটা টুর্নামেন্ট দিয়ে অর্থাগমের পথ খোঁজেন, তাঁদের শিক্ষা কতটা 'আদর্শ' হবে, সে ব্যাপারে নিঃসংশয় হওয়া যায় কি? যে খেলায় অর্থই সব, সেখানে ৭৫ হাজারের চেয়ে ৫৭ কিংবা ৬৫ লাখ টাকা উপার্জনের লোভ সংবরণ করা কি খুব সহজ?

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে একটি ওয়ানডের ম্যাচ ফি ৭৫ হাজার টাকা।