তবু বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদী তাঁরা

বিপিএলের সেমিফাইনাল নাটক। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের মুখ খোলা। এশিয়া কাপের দল নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচক আকরাম খানের পদত্যাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে আবার ফিরে আসা। এমন পরিস্থিতির কারণে মুশফিকুরদের এশিয়া কাপের অভিযান লেজেগোবরে হয়ে যাবে না তো! সেই শঙ্কা আছে ভারতের সাবেক অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কারের মনে। এশিয়া কাপ নিয়ে নিজের লেখা কলামে তিনি উল্লেখও করেছেন সেটা, 'বাংলাদেশের দল নির্বাচন নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, যা আপাতত মিটেছে। তবু আয়োজকদের ড্রেসিংরুমে অস্বস্তি থাকবেই।'
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার এক যুগ পরও বাংলাদেশ বিশ্ব-ক্রিকেটে সমীহজাগানিয়া কোনো নাম নয়। ওয়ানডেতে হঠাৎ হঠাৎ বড় কোনো দলকে হারিয়ে মাঝে মাঝে চমক দেখায়। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের মতো দলকে পেছনে ফেলে হাবিবুল বাশাররা খেলেছিলেন সুপার সিক্সে। এ ছাড়া নিজেদের মাটিতে সাকিব বাহিনী হোয়াইটওয়াশও করেছে নিউজিল্যান্ডকে। তাই এশিয়া কাপটা নিজেদের দেশে হচ্ছে বলে বাংলাদেশকে অবহেলা করছেন না গাভাস্কার, 'মাশরাফি দলে ফেরায় বাংলাদেশ দলের ভারসাম্য বাড়বে। সেই সঙ্গে সাকিব আল হাসান নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলতে পারলে বাংলাদেশ বাকি দলগুলোকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ফেলতে পারবে।'
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর জেমি সিডন্সের জায়গায় নতুন কোচ হিসেবে এসেছেন স্টুয়ার্ট ল। সাকিবের বদলে অধিনায়ক এখন মুশফিকুর রহিম। শুরুতে খুব বেশি সাফল্য অবশ্য পাননি এই উইকেটরক্ষক। তাঁর নেতৃত্বে ৬ ওয়ানডেতে একটিই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে মুশফিকুরকে নিয়ে আশাবাদী গাভাস্কার। ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো তিনিও উইকেটরক্ষক আর ব্যাটিং করেন মিডলঅর্ডারে। তাই ধোনির মাঝেই মুশফিকুরকে প্রেরণা খোঁজার পরামর্শ দিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ওপেনার গাভাস্কার, 'ধোনিকে দেখে অনুপ্রাণিত হোক মুশফিকুর। ধোনি দলকে নেতৃত্ব দেয়, উইকেটকিপিং করে এবং ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ব্যাটিংও করে। সে-ই এখন সেরা ফিনিশার। নেতৃত্বটা যদি তরুণ মুশফিকুরের ছোট্ট কাঁধে বড় বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়, ঠিকঠাক উইকেটকিপিং করতে পারে, নিচের দিকে ভালো ব্যাট করতে পারে আর দলের দরকারে জ্বলে উঠতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে ভালোই লড়াই করবে। ওরা আয়োজক, তাই গুরুত্ব দিতেই হবে বাংলাদেশকে।'
এশিয়া কাপে সবচেয়ে সফল দল ভারত। সর্বোচ্চ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন তারাই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার শিরোপা জিতেছে শ্রীলঙ্কা। যে ছয়বার জিততে পারেনি সেই আসরগুলোতে হয়েছে রানার্সআপ। তাই এবারও যদি ফাইনালে পেঁৗছে আর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগে গুরুত্বপূর্ণ কেউ চোট পেয়ে না বসে, সে ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকেই এগিয়ে রাখছেন গাভাস্কার, 'অস্ট্রেলিয়ায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা ফেভারিট হিসেবেই শুরু করবে। ক্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিততে না পারলেও ওদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ভালো। অন্যরা একটু পিছিয়ে, কেননা তারা ভালো খেলতে পারছে না। শ্রীলঙ্কার দুটো সমস্যাই চোখে পড়ছে আমার। একটি হচ্ছে ওরা অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি এসেছে দীর্ঘ বিমান যাত্রার পর। এই ধকলটা সমস্যা না করলে ওরা টুর্নামেন্টটার জন্য প্রস্তুত। অন্য সমস্যাটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে ওদের সেরা খেলোয়াড়দের চোট পেয়ে বসা। বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে যেমন চোট পেয়ে বসল ম্যাথুজ। অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে চোট পেয়ে বসল থিসারা পেরেরা। এশিয়া কাপেও যদি এমন কিছু হয় তাহলে পিছিয়ে পড়বে ওরা।'
ভারত আর পাকিস্তানকে নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন গাভাস্কার। তবে এক বছর আগে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছে বলে আর পাকিস্তান যে কাউকে যে কোনো দিন চমকে দিতে পারে বলে তাদের হেলায় উড়িয়েও দিচ্ছেন না, 'ভারতের এই দলটাই এক বছর আগে বিশ্বকাপ জিতেছে। তাই অস্ট্রেলিয়ার ব্যর্থতা পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে ওরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দরকারের সময় জ্বলে উঠতে পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। তার পরও পাকিস্তান এশিয়া কাপের ডার্ক হর্স। কেউ বলতে পারবে না এমনকি ওরা নিজেরাও বোধহয় জানে না কোন দিন কেমন খেলবে।'
গাভাস্কার শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে রাখলেও পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরামের ফেভারিট আবার ভারত। ইংল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়াতেও টেস্ট সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ভারত। ফাইনালে পেঁৗছতে পারেনি ত্রিদেশীয় সিরিজেও। তার পরও ভারতকে এগিয়ে রাখার ব্যাখ্যাটা আকরাম দিলেন এভাবে, 'ত্রিদেশীয় কমনওয়েলথ ব্যাংক সিরিজের পর এগিয়ে থাকবে শ্রীলঙ্কা। দল হিসেবে খেলতে পারলে পাকিস্তানকে হারানো খুবই কঠিন। তবে কাগজে-কলমে সেরা দল ভারতই। বাটিংয়ে ওদের গভীরতা যেমন অনেক তেমনি বৈচিত্র্য আছে বোলিংয়েও। ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে নিজেদের সামর্থ্য বুঝিয়েছে ওরা। যখন কেউ দুর্দান্ত খেলা একটা দলের বিপক্ষে ৩২০ রান তাড়া করে ফেলে ৭ উইকেট আর ৮০ বল হাতে রেখে, এই সাফল্যটা হয়ে যায় পরশমণির মতো। এটা কি ঢাকায় আরো উদ্দীপ্ত করবে ভারতকে? সম্ভবত হ্যাঁ।'
ধোনির নেতৃত্বের প্রশংসা সব সময়ই করে এসেছেন ওয়াসিম আকরাম। অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকেরও তিনি ভক্ত। তবে এ দুজনের চেয়ে তো বটেই এ মুহূর্তে বিশ্ব-ক্রিকেটেরই সেরা অধিনায়ক বলে মনে করেন মাহেলা জয়াবর্ধনেকে, 'তিন অধিনায়কই যথেষ্ট যোগ্য, তবে এ মুহূর্তে মাহেলা বিশ্বসেরা অধিনায়ক। ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় আরো একবার দিয়েছে ও। যেকোনো দলই চাইবে ওর মতো একজন অধিনায়ককে।'
ওয়াসিম আকরাম ভারতকে এগিয়ে রাখলেও পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কোচ ওয়াকার ইউনুস কিছুটা এগিয়ে রাখছেন শ্রীলঙ্কাকে। তবে বাংলাদেশকে নিয়ে গাভাস্কারের মতোই আশাবাদী ওয়াকার, 'গত কিছুদিন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা_তিন দলেরই পারফরম্যান্স দেখেছি আমরা। অস্ট্রেলিয়ার ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কা অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো খেলায় এশিয়া কাপেও ওরা এগিয়ে থাকবে কিছুটা। তবে উপমহাদেশের পিচ আর কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে বলতেই হবে, যে দল যেদিন ভালো খেলবে জিতবে তারাই। বাংলাদেশকেও হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না, ওরা অনেক ভালো দল। বাংলাদেশ হয়তো এশিয়া কাপ জেতেনি তবে ওদের সামর্থ্য আছে বড় দলগুলোকে হতাশ করার।'