শেখার কথা বলে আফসোসও করলেন মুশফিক

অঘোষিত কারফিউয়ের রাতে যেখানে বিজয় মিছিল বেরোনোর কথা, সেই রাতটা কি না শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য হয়ে গেল বিষাদের। বাংলাদেশের জন্য আনন্দের রাত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েও তা হয়ে গেল আফসোসের রজনী। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে জয়ের কাছ থেকে ঘুরে আসা দেখে ফিরেছেন দর্শকরা।
টস হেরে পাকিস্তান ব্যাটিং করতে নামার পর যাঁদের উপস্থিতি মোটেও আশাব্যঞ্জক ছিল না। যে জন্য এশিয়া কাপের ইভেন্ট ম্যানেজার ইফতেখার রহমান বিস্ময় প্রকাশ করে বলছিলেন, '৭০ পারসেন্ট টিকিট বিক্রি হয়েছে এ ম্যাচের, ২৫ হাজারের মধ্যে ১৬ হাজার ৮০০। কিন্তু দর্শক কোথায়?' অবশ্য এ জন্য দর্শকদের দোষ দেওয়ার কিছু ছিল না। আজ প্রধান বিরোধী দলের লংমার্চের কর্মসূচির প্রভাবেই যে কাল সময় যত গড়িয়েছে, ততই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর সুনসান নীরব চারদিক, কারফিউকালীন আবহই তৈরি করেছিল যেন। অথচ এর মধ্যেও দেখা গেল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরে উঠেছে অনেকটাই। বিশেষ করে বাংলাদেশ পাকিস্তানের ২৬২ রান তাড়া করতে শুরু করার পর।

দর্শকরা তামিম ইকবালের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন দেখলেন। এরপর দেখলেন সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেনের ব্যাটে জয়ের সৌরভ পাওয়া যাচ্ছে। সেখান থেকে ম্যাচটা হেরে যাওয়ার জন্য মুশফিকুর রহিমের আফসোস হবেই। তিনি সেটা করলেনও। আর এত দূর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য তিনি বোলারদের কৃতিত্ব দিয়ে রাখলেন সবার আগে, 'পাকিস্তান যে গতিতে শুরু করেছিল, তাতে একসময়ে মনে হয়েছিল ২৮০ থেকে ৩০০ রান করবে। এরপর আমাদের বোলাররা দারুণভাবে ফিরে এসেছে।' জয় যখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে, তখন নাসিরের আউটেই ছন্দপতন হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট আমার দৃষ্টিতে নাসিরের আউটটা। কারণ, ওই সময়ে আমাদের ৪০ বলে ৩৯ রান দরকার ছিল। দুজন একদম ওয়েলসেট ব্যাটসম্যান ছিল। ওই জায়গাটাতেই পার্থক্য হয়ে গেছে।' এ জায়গা থেকে ম্যাচ হেরে যাওয়ার ভুল শুধরে নেওয়ার তাগিদও কম অনুভব করছেন না এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান, 'এ ব্যাপারগুলো আমাদের শিখতে হবে। কারণ, বড় দলের সঙ্গে জিততে হলে আপনাকে একেবারে শেষ বল পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রেখে শত ভাগ দিয়ে খেলতে হবে। বড় দলের সঙ্গে এ জায়গাতেই আমরা ভুল করছি।'

আর তাঁদের ভুলের ফাঁদে ফেলে পাকিস্তানের জয়টা তুলে নিয়েছেন আসলে ফাস্ট বোলার উমর গুল। তবে এর আগে ব্যাট হাতে তাঁর (২৫ বলে ৩৯) অবদানের কথাও বলতে ভুললেন না ম্যাচ সেরা মোহাম্মদ হাফিজ, '২৩০ রানও আমরা করতে পারব কি না, সে বিষয়ে একপর্যায়ে ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু গুলের ব্যাটিংয়ে আরো বেশি হলো।' ব্যাটে-বলে (৮৯ রান ও ২ উইকেট) অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে আসা হাফিজ অবশ্য এরপর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে বিস্মিত হননি। তবে এও বললেন, 'নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের রেকর্ড ভালো। তাই আমরা বিস্মিত হইনি। তবে আমরা এ ব্যাপারেও খুব নিশ্চিত ছিলাম যে ওদের অলআউট করে দিতে পারব। কারণ, সেটা করার মতো বোলার আমাদের আছে।'

তবে হারলেও গত কিছু দিনে মাঠের বাইরের নানা সমস্যার প্রভাব যে দলে পড়েনি_তা নিয়ে সন্তোষ ঝরল মুশফিকের কণ্ঠে, 'গত কয়েকটা টিম মিটিংয়ে সবাইকে এ বার্তাটা পেঁৗছে দেওয়া হয়েছিল যে আমরা খেলোয়াড়। এবং আমাদের মাঠের পারফরম্যান্সই গোনা হয়। কাজেই দিনের শেষে আমাদের জবাবদিহিতা থাকতে হবে এবং পারফর্ম করতে হবে। সেটা হয়েছে বলে আমরা খুশি। বিশেষ করে তামিমের কথা বলব। প্রমাণ করেছে ও অনেক বড় মাপের খেলোয়াড়।' তবে ম্যাচটা শেষ করে আসতে না পারা নিয়ে অধিনায়কের অসন্তোষ আছেই, 'আমি ও রিয়াদ ভাই দ্রুত আউট হয়ে গেছি। এগুলো না ঘটলে হয়ত আমরা আরো আগেই জিতে যেতাম। এসব দিক আমাদের শেখার আছে। অনেক ম্যাচই আমরা শেষ করে আসতে পারি না। এটা আমরা করতে পারি না। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি এটা শিখতে হবে। আমাদেরই শুরু করতে হবে।' অঘোষিত কারফিউয়ের রাতেই যার শুরুটা হতে পারত!