উইকেট হারিয়ে ব্যর্থতায়ি বাংলাদেশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে

দীর্ঘ ১৪ মাস পর টেস্ট। তাই সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, জুনায়েদ সিদ্দিকী, ইমরুল কায়েসরা বাড়তি চাপে ছিলেন, যা গতকাল তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিনের ব্যাটিংয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যর্থতার পাশাপাশি লম্বা সময় দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট না খেলার অনভ্যস্ততায় হারারে স্পোর্টস সিটি ক্লাবে বাংলাদেশের ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৬০.১ ওভার। অথচ দেশ ছাড়ার আগে কোচ স্টুয়ার্ট ল টেস্টে কমপক্ষে ১২০ ওভার ব্যাটিং করার তাগিদ অনুভব করেছিলেন। কিন্তু কাল প্রথম সারির ছয় ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতায় ১৮৮ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ মাত্র ৩৯ রান! অবশ্য বোলাররা উইকেটের সুবিধাকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন। ৪২ রানে তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। টেস্ট বিরতির লম্বা সময়ে ওয়ানডে ছাড়া কোনো দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলেননি ক্রিকেটাররা। এই না খেলার আকুলতা নিয়েই জিম্বাবুয়ে উড়ে গিয়েছেন ক্রিকেটাররা। ৪-৮ আগস্ট টেস্ট খেলতে নামার আগে তিন দিনের এই প্রস্তুতি ম্যাচটাকে ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন নতুন কোচ স্টুয়ার্ট ল। বলেন, তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। জিম্বাবুয়ের উইকেট এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় নেই ক্রিকেটারদের। কিন্তু সেটা কি মানিয়ে নিতে পেরেছে সাকিব বাহিনী? ভিসা জটিলতায় দীর্ঘ ৪১ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে পরশু বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হারারে পেঁৗছেন ক্রিকেটাররা। ওই দিন বিকালে হারারে একাডেমি মাঠের অনুশীলনকে পুঁজি করেই খেলতে নামেন প্রস্তুতি ম্যাচ। হারারের সিটি ক্লাব মাঠের উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ইমরুল কায়েসকে হারানোর পরের বলেই ফিরে যান জুনায়েদ সিদ্দিকী। ৮ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পরিবর্তে আবারও চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আশরাফুল। শূন্য রানে সাজঘরে ফিরে আসেন স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে ফিরে জারভিসের বলে। ১০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শাহরিয়ার নাফিস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২০ রান যোগ করেন চতুর্থ উইকেট জুটিতে। শাহরিয়ার ১০ রানে আউট হওয়ার পর অধিনায়ক সাকিব জুটি বাঁধেন রিয়াদের সঙ্গে। কিন্তু চাপ এড়াতে ব্যর্থ হয়ে সাকিব সাজঘরে ফিরে আসেন শূন্য রানে। ৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যর্থতার গোলচক্করে ঘুরতে থাকা বাংলাদেশ ৬৭ রানে রিয়াদকে হারিয়ে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ৬৭ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ইনিংস শয়ের নিচেই থেমে যাবে। উইকেটের মুভমেন্টের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে পুরো দল যখন কুঁকড়ে উঠেছে, তখনই সপ্তম উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিম ও তরুণ নাসির হোসেন ৭২ রান যোগ করে দলের মুখ রক্ষা করেন। এর মধ্যে নাসির ৩৮ রানে আউট হলেও অসাধারণ দৃঢ়তার পরিচয় রাখেন। ৬০ বলের ইনিংসটির স্থায়িত্ব ছিল ৭৯ মিনিট। আর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন ১৪৩ বলে প্রায় তিন ঘণ্টার সামান্য উপরে উইকেটে থেকে। ১৬৭ রানে মুশফিকের বিদায়ের পর আর বেশি সময় স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ২১ রান যোগ করেই গুটিয়ে যায় ১৮৮ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৮৮/১০, ৬০.১ ওভার (ইমরুল কায়েস ৮, জুনায়েদ সিদ্দিকী ০, শাহরিয়ার নাফিস ১০, মোহাম্মদ আশরাফুল ০, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২১, সাকিব আল হাসান ০, মুশফিকুর রহিম ৬৪, নাসির হোসেন ৩৮, আবদুর রাজ্জাক রাজ ১২, শফিউল ইসলাম সুহাশ ১৬, রবিউল ইসলাম ১। মেথ ২/৩৬, জারভিস ২/২০ চাতারা ১/৩৬, এনকুবে ৩/৩৬, উতসেয়া ২/৪৭)।
জিম্বাবুয়ে একাদশ প্রথম ইনিংস : ৪২/৪, ১৬.১ ওভার (মাওয়ো ১৭, সিকান্দার রাজা ৫, ছাকাব্বা ০, টাইবু ৮। শফিউল ইসলাম সুহাশ ২/২১, রবিওল ইসলাম শিপলু ১/৮, নাজমুল হোসেন ০/৯)