মনে হয়েছে কেউই জানে না তার কী কাজ?

ফারুক আহমেদ খুব মনোকষ্ট নিয়ে লেখাটা শুরু করছি। খেলায় হার-জিত থাকবেই, তাই বলে এমন হার তো কেউ আশা করে না। যে হার ক্রিকেটপাগল পুরো জাতির বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেয়। টেস্ট দল হিসেবে আমাদের সামর্থ্যকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়। সুতরাং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই হারের ময়নাতদন্ত খুব জরুরি, নইলে যে ভুলগুলো বারবার করার শঙ্কা থেকে যায়।
এই একটা হারেই যে আমাদের সব স্বপ্ন ভূলণ্ঠিত, তাই এই ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে আর কোনো রেটিং করা যায় না। করতে হলে পুরো দলের পাশেই শূন্য বসাতে হয়। আর সেই নেপথ্য কারিগরের জন্য কত বরাদ্দ হবে তা আমার জানা নেই। এই একটি ম্যাচ সব শেষ করে দিয়েছে। ভীষণ ক্ষতি হয়েছে আমাদের রানরেটে, তারপর আত্মবিশ্বাস গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। বলতে গেলে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে এখন আমাদের কোয়ার্টার ফাইনাল স্বপ্ন।
টস জিতে আমরা ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে হেরে গেলেই বোধহয় আরো ভালো হতো, তখন তারা ব্যাটিং নিত। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যদি আমাদের পারফরম্যান্সটা আরেকটু ভালো হতো। এটা হেঁয়ালি, এ হারের জ্বালা সহ্য করতে না পেরেই মনে এমন চিন্তার উদয়। আবার এই দলের ব্যাটিং অর্ডার আর গেম প্ল্যান দেখলে তো এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করতে পারি না। অস্ট্রেলিয়া, ভারত কিংবা অন্য দলগুলোর দিকে তাকালে দেখব, তাদের সব খেলোয়াড় জানে কার কাছ থেকে দল কী চায়। কার কখন কী কাজ হবে। কিন্তু আমাদের দলের খেলা দেখে মনে হয়েছে তারা কিছুই জানে না, কোন পরিস্থিতিতে কার কিভাবে খেলতে হবে, এটা তাদের ব্যাটিংয়ে প্রতিফলিত হয়নি। ব্যাটিং অর্ডারে যেমন আশরাফুলের সাত নম্বরে খেলাটা কোনোভাবেই মানা যায় না। দলে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তর্ক হতে পারে, প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু দলে সুযোগ পেলে তার জায়গা অবশ্যই সাত নয়, ওখানে নামিয়ে কোনো ব্যাটসম্যানকে ফর্মে ফেরানো যায় না। আবার রকিবুলের বেলায় দেখুন, সে হতে পারে চার নম্বরের উপযুক্ত ব্যাটসম্যান, খেলাটা ধরবে। দলের বিপদে ১০০ বলে ৫০ করলেও কোনো ক্ষতি নেই। সে নামে ৬ নম্বরে। মনে হয় তাকে কোনোরকমে দলে রেখে ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়াটাই আমাদের কোচের মুখ্য উদ্দেশ্য।
আসলে ব্যাটিং আমাদের বড় এক সমস্যা। গত ৮ মাস আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি, কিন্তু ২৮০ রান করেছি সেদিন বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে। আর কটা ম্যাচে আমরা এ রকম করতে পেরেছি? পারিনি। আমরা ২৩০-২৪০ কিংবা ২০০-এরও কম রান করেছি, তারপর বোলিং দিয়ে ম্যাচ জিতেছি। জয়ের কারণে আর আলো পড়েনি আমাদের দুর্বল ব্যাটিংয়ের দিকে। আলো যখন পড়েছে তখন সব শেষ এবং মূল কোচ সিডন্সকেই নিতে হবে সব দায়। কারণ ব্যাটিং নিয়েই তাঁর কাজ। মনে হচ্ছে, তিনি বোঝাতে পারছেন না অথবা আমাদের ক্রিকেটাররা তাঁকে বুঝতে পারছে না।
অথচ এই কোচ অন্য সব কিছু খুব ভালো পারে। অশোভন ও অসংলগ্ন কথাবার্তায় ওস্তাদ তিনি। বিশ্বকাপের ১৫ জনের দল ঘোষণা করেই বলেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস ও আশরাফুলকে নেওয়া হচ্ছে ব্যাক-আপ হিসেবে। মানে তাঁর একাদশ তৈরি, অন্যরা খারাপ করলে তারা সুযোগ পাবে। এখানেই তো তিনি একটা বিভেদ তৈরি করে দিলেন দলের মধ্যে। শুনেছি, দলের ভেতরও আছে কলহ। কোচ হয় দলকে ছায়া দেওয়ার জন্য, সুন্দরভাবে চালিত করার জন্য, সেখানে তাঁর নীতি বিভাজন। এমন কোচের শিক্ষায় তো অধিনায়কও প্রশ্রয় পাবে, উৎসাহিত হবে অন্তর্কোন্দলে।
তারপরও বলি, সব এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আগামী ম্যাচের আগের ছয় দিনের বিরতি। ফেরা যায় ভালো ক্রিকেট খেলার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। আমাদের স্বপ্নের পথটা বেশ কঠিন হয়ে গেলেও আগামী ম্যাচগুলো স্বাগতিক দর্শকদের জন্য উপভোগ্য করে তোলার প্রত্যয় নিয়েই ফিরে আসুক বাংলাদেশ।
 দৈনিক কালের কন্ঠ থেকে কপি করা হয়েছে