সিডন্স আসলে কী শেখাচ্ছেন?

নাঈমুর রহমান স্টেডিয়ামে যেতে যেতে আমাদের চার উইকেট নেই। ঢুকে সিটে বসতে বসতে আরো দুটো। এই ম্যাচ এমন বিভীষিকা নিয়ে হাজির হবে, ভাবতে পারিনি। সবচেয়ে খারাপ লেগেছে কারো ব্যাটে কোনো প্রতিরোধ দেখলাম না। দরকার হলে চার-পাঁচটা ওভার মেডেন দেব, কিন্তু টিকে থেকে ইনিংস মেরামত করতে হবে আমাকে_এই খেলাটা কেউ খেলল না। উইকেট পড়ছে আর সবাই শট খেলে যাচ্ছে। এটাই হলো একটা টেস্ট দলের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক দিক। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা আমরা হারতে হারতে জিতেছিলাম। এ রকম জয় হলো একটা সতর্কীকরণ। তাতে দলের স্পিরিট বেড়ে যায়, পরের ম্যাচে ফেরে তারা দুরন্ত গতি নিয়ে। আমাদের বেলায় হয়েছে তার উল্টো। কেন এমন হলো তার কোনো ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাই না। হতে পারে উইকেট খুব বাজে হলে, ব্যাটিং করার মতো অবস্থা না থাকলে। হতে পারে কোনো বোলার মারাত্মক বোলিং করলে। দুটোর কোনোটিই কিন্তু ছিল না ওই দিনের ম্যাচে, শুধু ম্যাচের গুরুত্বের কথা ভুলে গিয়ে আমরা রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলাম বলেই এই পরিণতি হলো আমাদের।
শুরু থেকেই এই দলের ব্যাটিং অর্ডার আমার অপছন্দ। যেমন মুশফিক কেন চারে খেলবে আর আশরাফুল কেন সাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অমন হারের পর এসব কথা বলার কোনো মানে নেই। কারণ দলটার ওপর আসলে আমি ও রকম আস্থা রাখতে পারছিলাম না। তার একটা বড় কারণ এই কোচ। জেমি সিডন্স ক্রিকেট খেলা শেখানোর কাজ বাদ দিয়ে অন্য সব কিছু করছেন। এমন স্বাধীনতা আমরা তাঁকে দিয়েছি কোনো কোনো ক্রিকেটার সম্পর্কে তাঁর মুখে যা আসছে তাই বলে দিচ্ছেন। বলেছেন ক্রিকেট বোর্ডের এবং বোর্ড কর্তাদের নিয়েও। এরপর তাঁর ওপরই আমরা ভরসা রাখছি। বিদেশি কোচ হলে যা হয়, তাঁদের সব কিছুই ভালো। অথচ সর্বময় স্বাধীনতা পেয়ে তাঁরা প্রথমেই করে দল থেকে সিনিয়র খেলোয়াড় ছেঁটে ফেলার কাজটা। কারণ তাঁরা ভালো ক্রিকেটার চান না, চান ছাত্র। যারা সব সময় তাঁকে সালাম দিয়ে চলবে। আবার কিছুদিন আগে থেকে সিডন্সের এ দল নিয়ে নানা অন্তর্কলহের কথা শুনছিলাম। অধিনায়কের ব্যাপারে কানে আসছিল নানা কথা। কামনা করি যেগুলো শুনেছি সেগুলো যেন ভুল হয়। আমার মনে হয়, এখনকার খেলোয়াড়রা নিজেকে নিয়েই বেশি থাকে। আগে দেখতাম, একই দলে চার-পাঁচজন ভালো বন্ধু আছে। তারাই দলের পরিবেশটা অনেক সহজ ও আন্তরিক করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অধিনায়কের কাজটা করে দেয় মাঠের বাইরে। এই ধাক্কার পর দলের ভেতর অনেক কাজ করতে হবে সাকিবকে।
আর দলের সবাইকে বলছি, এই ম্যাচের কথা ভুলে গিয়ে নিজেরা যেন ইতিবাচক হয় পরের ম্যাচগুলোর জন্য। ভুলে যেতে হবে দর্শক-সমর্থকদের দুয়োধ্বনির কথা। তারাই আসলে আমাদের ক্রিকেটের জ্বালানি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই পারফরম্যান্সে তারা ক্ষুব্ধ হলেও আবার সামনের ম্যাচে ভালো খেললে তারাই তোমাদের মাথায় তুলে নাচবে। আগের সব যন্ত্রণার কথা ভুলে যাবে এই জাতি!                                          দৈনিক কালের কন্ঠ থেকে কপি করা হয়েছে