সাকিব আর দলের মধ্যে একটা দূরত্ব আছে !!!

খালেদ মাহমুদ আয়ারল্যান্ডের কাছেও আমরা হারতে পারতাম। হারিনি। সেদিনও আমাদের ব্যাটিং বাজে হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা নিইনি। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এমন উলঙ্গ হয়ে ধরা পড়েছে আমাদের ব্যাটিং।
তাই ম্যাচের আগে আমি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ভেবেছিলাম আমাদের ব্যাটিংকে। তবে এ রকম বিশ্রী ব্যাটিং হবে, তা কল্পনাতেও ছিল না। গেম প্ল্যান বলে কোনো বস্তু দেখলাম না। সব দলই সাধারণত একটা স্কোরকে টার্গেট ধরেই নামে। আমাদের সেই টার্গেটটা সাধারণত ২৫০-এর ওপরে থাকে। উইকেটের চরিত্র আর নিজেদের প্রায়োগিক দক্ষতায় সেই টার্গেটা ওঠা-নামা করে। পরশু এটা একদম দেখলাম না। ৪/৫ উইকেট পড়ে গেলে যে ১৮০ থেকে ২০০ করার প্ল্যান হয়, সেটা অন্তত স্পষ্ট হয়নি আমাদের ব্যাটিংয়ে। স্কোর বোর্ডে মোটামুটি একটা রান না থাকলে যে পুরো ব্যাপারটা লজ্জাকর হয়ে যায় সেটাও তাদের বোধে আসেনি! অথচ এই দলের নেপথ্যে কাজ করেছে বিশাল এক টিম ম্যানেজমেন্ট। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য। বড় প্রশ্নটা আমাদের কোচ সিডন্সকে নিয়েই। চার বছর ধরে কোচিং করিয়েছেন তিনি বিশ্বকাপে এই লজ্জা উপহার দেওয়ার জন্য! কোচিংয়ের জন্য এত আয়োজনের পর এই ফল! এর জন্য তো কোনো প্রোফাইলধারী কোচের প্রয়োজন নেই, রিকশাওয়ালাকে দায়িত্ব দিলেও এর চেয়ে খারাপ করতে পারবে না।
যদি বলেন ক্রিকেটারদের ওপর প্রত্যাশার চাপের কথা, সেটা আমি মানতে রাজি নই। চাপ ছিল আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচে নয়। আরেকটা কথা হচ্ছে, এই চাপ বিশ্বকাপ জয়ের নয়। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলে মানুষের সমর্থনের প্রতিদান দেওয়া। এটুকু নিতে না পারলে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া উচিত নয়। বিশ্বকাপ হলো নিজেকে এবং নিজের দেশকে আলোকিত করার মঞ্চ, যেমনটি করেছে কেভিন ও'ব্রায়েন। সেটাকে কেউ চাপ মনে করলে তার দলে থাকারই দরকার নেই।
এই দল নিয়ে নানা কথা কানে আসছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও চলে এসেছে আমাদের অধিনায়কের সঙ্গে দলের অন্যদের দূরত্বের কথা। সেটা হতে পারে সাকিবের পারফরম্যান্স, যা হয়তো বা তাকে আলাদা করে রাখে অন্যদের থেকে। এখানে কিন্তু কোচ জেমি সিডন্সের বিরাট একটা ভূমিকা আছে। যে দু-তিনজন পারফর্ম করে তিনি তাদের নিয়েই নাচেন। প্রশ্রয়ও দেন বিভিন্নভাবে। প্র্যাকটিসে তারা দেরিতে গেলেও কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যারা ফর্মহীনতায় ভোগে তারা এই কোচের চক্ষুশূল। প্র্যাকটিসে দেরি হলে তো বটেই, নানা ছুঁতোয় তাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয় সিডন্স। তার প্রশ্রয়ে আমাদের দলে শৃঙ্খলাটাও একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের দীর্ঘদিনের ক্রিকেট কালচারটা।
অথচ ক্রিকেট দল হয় একটা পরিবারের মতো। সেখানে আন্তরিকতা থাকবে, খারাপ সময়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়াবে এবং অবশ্যই এই সহযোগী মনোভাব সঞ্চারের জন্য বড় ভূমিকা নিতে হয় অধিনায়ককে। মাঠে যেমন সে নেতা মাঠের বাইরে তেমন নেতৃত্বগুণ দিয়ে অধিনায়কই একাট্টা করে রাখে ক্রিকেট দলকে। নিজের ভালো পারফরম্যান্সের পরও এখানেই বোধহয় সাকিবের ঘাটতি। তাতে করে চরম দুরবস্থা থেকে দলকে ফেরানোর রাস্তাটাও একটু কঠিন হয়ে গেল।                                                                   দৈনিক কালের কন্ঠ থেকে কপি করা হয়েছে