ক্ষতগুলো খুব স্পষ্ট হয়ে গেল !

আমিনুল ইসলাম বুলবুল দেশবাসীর মতো এই খেলা দেখে আমি মর্মাহত এবং লজ্জিত। তবে এ হারই পারে আমাদের চোখ খুলে দিতে।
ধরে নিচ্ছি আমি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রান করে আমাদের ৯ উইকেটের হার একটা দুর্ঘটনা। যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই দলে অনেক ক্ষত। যেমন কত রান করার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছিলাম, সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। দেখলাম না, একটা কৌশল ফেল মারলে পরের কৌশলটা কী হবে। বুঝলাম না, ব্যাটসম্যানরা আসলে কী উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছিল ক্রিজে। সব মেলালে একটি টেস্ট দলের সবচেয়ে কুৎসিত ওয়ানডে প্রদর্শনী দেখলাম।
৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও বুঝতে পারছিলাম না আমরা ওয়ানডে খেলছিলাম নাকি টোয়েন্টি টোয়েন্টি কিংবা তার চেয়েও ছোট সংস্করণের কোনো ম্যাচ। ৫০ ওভার যে খেলে যাবে তার কোনো প্রতিজ্ঞা ছিল না এই দলের মধ্যে। দেখলাম একেবারে গেম প্ল্যানহীন বাংলাদেশকে। ভরাডুবি তো ব্যাটিংয়ে। অথচ আমাদের কোচিং স্টাফে হেড কোচ নিজেই ব্যাটিং কোচ। তাঁর কাছে আমার প্রশ্ন, এই জায়গায় কেন এত দুর্বলতা? দীর্ঘদিন আপনার উপস্থিতির পরও আমাদের ব্যাটসম্যানরা কেন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করতে শিখবে না? ব্যাটিংয়ে কেন থাকবে না পরিকল্পনার ছাপ?
বরং আমার কাছে মনে হয়েছে, এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে দুর্বলতম এবং গোঁজামিল দেওয়া ব্যাটিং লাইন-আপ হলো আমাদের। ব্যাটিংটা হলো তামিম ও ইমরুল রান করবে আর সাপোর্ট দিয়ে যাবে অন্যরা। এ দুজন ছাড়া বাকিদের কোনো দায় নেই ব্যাটিং নিয়ে। বলছেন, আপনার লম্বা ব্যাটিং লাইন-আপ, কিন্তু নাইম ও মাহমুদ উল্লাহর ওপর কতখানি নির্ভর করা যায়! দু-তিনজনকে বাদ দিলে এই দলে ক্ষমতাবান ব্যাটসম্যান কোথায়? অলক কাপালির মতো একজন ব্যাটসস্যান নেই। নেই আফতাবের মতো প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেই শুনেছিলাম, তাকে ফোনে পাওয়া যায় না সব সময়। ক্রিকেট প্রতিভা থাকলে তো তাকে সযত্নে লালন করার কাজ কোচের। আমাদের নাকি স্পিনই বড় শক্তি অথচ দলে কোনো জেনুইন অফ স্পিনার নেই, নেই জেনুইন লেগ স্পিনার। অথচ আমরাই বলে আসছি, দারুণ প্রস্তুতি আমাদের বিশ্বকাপের জন্য। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই লাফ দিয়ে পেঁৗছে গেছি কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু এভাবে তো হতে পারে না, একসময় আপনাকে ধাক্কা খেতেই হবে। সেটাই নির্মম হয়ে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচে। তাই টিম ম্যানেজমেন্টকে বলছি, তথাকথিত মাল্টিস্কিল তথ্য ভুলে গিয়ে ব্যাটে-বলের জেনুইন পারফর্মার আনুন দলে।
এই ম্যাচে সাকিবকে দেখেও আমি একটু অবাক হয়েছি। দলের প্রথম দুই বোলারের একজন কিন্তু বল করতে গেছে শেষে। সেটা কেন হবে? সে আবার অধিনায়ক। সুতরাং সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং একই সঙ্গে মোটিভেটর হয়ে ওঠার কাজটা সাকিব ঠিকঠাক করতে না পারলে সামনে সমূহ বিপদ।
সব শঙ্কা ঝেড়ে আমাদের আবার তৈরি হতে হবে। এই ম্যাচের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে ডুব দিতে হবে সুখস্মৃতিতে। নিজেদের ভালো ইনিংসগুলোয়। দুঃসময় থেকে বেরিয়ে আসার আরেকটা পরামর্শ হলো, সাবেক তারকাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিন। নান্নু ভাই, ফারুক ভাই, হাবিবুল বাশার, সুজন, পাইলটসহ আরো অনেকে আছে যারা এই দলকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। চরম দুঃসময়ে দলের পাশে থেকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে পারে। সবাইকে দূরে ঠেলে না দিয়ে কাছে টানাই হতে পারে সাফল্যের নতুন ফর্মুলা।
সুত্র :  দৈনিক কালের কন্ঠ