ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে উদ্দীপ্ত লাল-সবুজ এর বাংলাদেশ !

 চট্টগ্রামের পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফারুক আহমেদও বুঝতে পারছেন না, কীভাবে ব্যাপারটা ঘটে গেল। তাঁর অফিস থেকে কোনো নির্দেশনা নেই, তার পরও রাস্তায় চলা সবুজ সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোর গায়ে হঠাত করেই লাল রং! সব সিএনজির গায়েই বড় বড় লাল ফোঁটা। কোনোটার গায়ে একটা-দুইটা, কোনোটার গায়ে অসংখ্য। লাল-সবুজ মিলে রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা একেকটা সিএনজি যেন চলন্ত জাতীয় পতাকা ! শহরের জিইসি মোড় এলাকায় এক অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পাশে থাকতেই তাঁদের এই উদ্যোগ। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা লাল-সবুজ, জাতীয় দলের জার্সি লাল-সবুজ। সবুজ সিএনজির গায়ে সামান্য লালের উপস্থিতি এনে যদি দেশ আর দলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা যায়, ক্ষতি কী ?ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে বিষম ধাক্কা খাওয়ার পর এভাবে লাল-সবুজে একাত্ম হতে চাইছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও। লাল-সবুজ পতাকাতলে টিম স্পিরিটের চর্চা বেড়েছে, সে সঙ্গে চলছে অভিনব কিছু করে একঘেয়েমি দূর করার চেষ্টা। কাল অনুশীলনের আগে ওয়ার্মআপ সেশনে যেমন মাঠের মধ্যেই হলো নৌকাবাইচ! সারি বেঁধে মাঠে বসে কাল্পনিক বৈঠা দিয়ে নৌকা বাইল ক্রিকেটাররা। ওয়ার্মআপের ছায়ায় সবাই মিলে কাজ করার অনুশীলন। টিম স্পিরিটের গান আবহসংগীত হয়ে বেজেছে ক্যাচিং প্র্যাকটিসেও। একটু দূরে দূরে দাঁড়িয়ে মাঠের মধ্যে ক্রিকেটারদের দুটি লম্বা সারি। ছোট ছোট থ্রোয়ে বল চলে যাচ্ছে একজনের হাত থেকে আরেকজনের হাতে। এভাবে যে সারির ক্রিকেটাররা আগে ক্যাচ নেওয়া শেষ করবে তারাই জয়ী। আজ ছুটির দিনটাও সবাই একসঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা। সতীর্থদের ভাটিয়ারিতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছে সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবালের কাঁধে।এই সবকিছুই আসলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউটের ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা। গত ম্যাচ নিয়ে ঘরে-বাইরে যে রকম সমালোচনা, শ্বাস ফেলারও তো একটা জানালা দরকার! তামিম অবশ্য আশাবাদী, ১১ মার্চ ইংল্যান্ড ম্যাচের আগেই ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠবে সবাই, ‘সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করছে বিষয়টা ভুলে যেতে। বলতে পারেন, ৮০-৯০ শতাংশ কাটিয়েও উঠেছে। ১১ মার্চ ভালো কিছু হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সঙ্গে দলের হয়ে দর্শক-সমর্থকদের কাছেও একটা অনুরোধ রেখেছেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের পর টিম বাসে ঢিল পড়েছে, ঢিল পড়েছে সাকিবের মাগুরার বাড়িতেও। তামিমের অনুরোধ, ‘সাকিব দেশের এক নম্বর খেলোয়াড়, বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। এমন আচরণ তার প্রাপ্য নয়। সবার কাছে অনুরোধ করব, তারা যেন এমন কিছু না করে। একদিন হারব, একদিন জিতব—এটাই স্বাভাবিক। ক্রিকেটে এটা হয়ই। তাই সবার উচিত আমাদের সব সময়ই সমর্থন করা। ভালো সময় এবং খারাপ সময়েও।’তামিমের অনুরোধ সমর্থকেরা রাখবে কি না কে জানে, তবে দেশাত্মবোধের একটা জায়গায় সম্ভবত বাংলাদেশ সহ-অধিনায়কের সঙ্গে সবাই একমতই হবেন। ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান নবজোত সিং সিধু নাকি এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলেছেন। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর গত ১০ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেট একদমই এগোয়নি, বাংলাদেশের খেলা দেখতে তাঁর ভালো লাগে না...ইত্যাদি। কাল ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে সিধুকে একহাত ঝাড়লেন তামিম, ‘ও (সিধু) মানসিকভাবে অসুস্থ। ওকে জিজ্ঞেস করুন ১০ বছর আগে ভারত কোথায় ছিল...ওটা বাদ দিন, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের কী অবস্থা হয়েছিল সেটাই জিজ্ঞেস করুন।’ সিধুর কথায় তামিমের রাগ করাটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ক্রিকেট গত ১০ বছরে এগিয়েছে কি না, অজ্ঞতার কারণে সেটা কেউ নাই জানতে পারেন। তাই বলে টেলিভিশনে গলা ফাটানোর কী আছে? ভারতীয় সাংবাদিকেরা অবশ্য তামিমকে আশ্বস্ত করলেন, অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি সৌরভ গাঙ্গুলী সিধুর কথার প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের প্রশংসাই করেছেন।সিএনজির গায়ে লাগা লাল রং থেকে শুরু করে মাঠের ‘নৌকাবাইচ’ আর সিধুকে তামিমের একহাত নেওয়া—দেশাত্মবোধে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা কোথায় নেই? ১১ মার্চ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় বাংলাদেশ। ৫৮ রান করাটা যে মোটেও তাদের সামর্থ্যের উদাহরণ নয়, সেটা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছে ইংল্যান্ড ম্যাচ। লাল-সবুজ দলে এ ম্যাচে আরেকটা নতুনত্বও চোখে পড়তে পারে সবার। ‘নতুন’ ম্যাচে ‘নতুন’ মুখ আনার চিন্তা চলছে থিঙ্ক ট্যাঙ্কে। কালকের আলোচনাটা সিদ্ধান্তের দিকে গড়ালে হয়তো ইংল্যান্ড ম্যাচেই দলে দেখা যাবে শাহরিয়ার নাফীস আর মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীকে। বাদ যাবেন কারা? গুঞ্জন সত্যি হলে মোহাম্মদ আশরাফুল ও নাঈম ইসলাম।