শাহাদাতের মতো প্রত্যাবর্তন হতে পারত মাশরাফিরও ?

প্রত্যাবর্তনের মঞ্চটা সাজানো ছিল দুজনের জন্যই। বীরদর্পে তাতে অধিষ্ঠিত হলেন শাহাদাত হোসেন, তাঁকে ঘিরে অলক্ষ্যে বয়ে যাওয়া চিরন্তন দীর্ঘশ্বাসটিকে আরেকটু উসকে দিয়ে। কিন্তু বীরের বেশে ফেরা হলো না মাশরাফি বিন মর্তুজার। অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষটা হলো অনেক আক্ষেপ নিয়ে। অথচ ভাগ্যের একটু পরশ পেলে কত ভিন্ন রকমই না হতে পারত!
মাশরাফির সঙ্গে ভাগ্যের বৈরিতার এই গল্প তো নতুন না। বারবার ভাগ্য তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, কিন্তু এর মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেই গড়ে নেন নিজের ভাগ্য। তাই তো ইনজুরির পর ইনজুরিতে তাঁকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিলেও তিনি ফুরিয়ে যান না। বরং মাঠের পারফরম্যান্সে প্রমাণ করেন নিজের অপরিহার্যতা। কালও করেছেন, অন্তত শুরুর দিকটায়। ১৩ এপ্রিল ২০১১ সালের পর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমে মাশরাফির শুরুটা ছিল দারুণ। না, চটকদার কিছু নয়। বলে গতির ঝড় তোলেননি কিংবা সুইং-বাউন্সে খাবি খাওয়াননি প্রতিপক্ষকে। তবে ঠিক লাইন-নিশানায় বল ফেলে ঠিকই চাপে রেখেছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ, নাসির জামশেদদের।

ইনিংসের প্রথম ওভারেই অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বল তুলে দিয়েছিলেন মাশরাফির হাতে। ওই ওভারে রান বলতে কেবল একটি ওয়াইড। পরের ওভারে এক রান, আর তার পরের দুই ওভারে দুটি করে রান। ইনিংসে নিজের পঞ্চম ওভারে এসে প্রথম বাউন্ডারির শিকার হন। প্রথম স্পেলে সেটিই শেষ ওভার। ৫-০-১৩-০ স্পেলটি জাদুঘরে রাখার মতো নয় ঠিকই, কিন্তু নিজেকে ফেরার লড়াইয়ে থাকা এক সৈনিকের বিবেচনায় দুর্দান্তই বলতে হবে।

কিন্তু এই যে প্রতিশ্রুতি, সেটির পূর্ণ প্রতিফলন আর থাকেনি ইনিংস শেষে। ১৯তম ওভারে ছয় বলের জন্য ফিরে দেন ১০ রান, ৪১তম ওভারে আরো চার। তখনো পর্যন্ত মাশরাফির বোলিং ফিগার যথেষ্ট ভদ্রস্থ : ৭-০-২৭-০। কিন্তু ৪৫তম ওভারে শেষ স্পেলে ফিরে পাকিস্তানের রানফোয়ারায় বাঁধ দিতে আর পারেননি। দুর্ভাগ্যই। উমর গুলের ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল অন্তত বার দুয়েক পড়েছে 'নোম্যানস ল্যান্ড'-এ। এই গুলই শেষ ওভারে হয়ে যায় মাশরাফির হন্তারক। টানা তিন বলে দুটি চার এবং এক ছক্কায় বিবর্ণ করে দেন তাঁর বোলিং ফিগার। শেষ বলে তাঁকে বোল্ড করাটা হয়ে থাকে মাশরাফির কেবলই সান্ত্বনা। ১০-০-৫৫-১ বোলিং ফিগার সে কথাই বলবে!

আর শাহাদাত? টেস্ট বোলারের তকমা গায়ে সেঁটে যাওয়ায় বছর দুয়েক ধরেই ওয়ানডেতে ব্রাত্য তিনি। রঙিন পোশাকে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে। কাল ফিরে দেখালেন ভেতরের আগুনটা একেবারে নিভে যায়নি। প্রথম স্পেলে তিন ওভারে ১৮ রান দেওয়ার পর অবশ্য তেমনটা মনে হয়নি। মনে হলো দ্বিতীয় স্পেলে ফেরার পর। টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট। প্রথমে বিপজ্জনক ইউনিস খান, এরপর সেঞ্চুরির সুবাস পাওয়া মোহাম্মদ হাফিজ, তারপর প্রতিশ্রুতিশীল আসাদ শফিক শাহাদাতের শিকার। এতেই মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে যায় পাকিস্তানের। তিন শ'র স্বপ্ন দেখা দলটি তো শেষ দিকে আড়াই শ ছুঁতেই ধুঁকছিল।

অর্ধযুগ আগের একটা সময়ে বাংলাদেশের নতুন বলের দুই ভরসা ছিলেন এই দুজন। মাশরাফি ও শাহাদাত। একজনের ইনজুরি, অন্যজনের খামখেয়ালিপনায় কক্ষচ্যুত হয়ে যায় এই জুটি। কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের ফেরার মঞ্চে প্রতিশ্রুতি ছড়িয়েছেন এ দুজন। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে আরেকটি ঘটনা কাল ঘটল বহু দিন পর। ঘরের মাঠে তিন বছরেরও বেশি সময় পর একাদশে তিন পেসার নিয়ে খেলল স্বাগতিকরা। ২০০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে সর্বশেষ তিন পেসার খেলিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর দেশের মাটিতে ২০০৯ সালে পাঁচটি, ২০১০ সালে ১৫টি এবং ২০১১ সালে ১৫টি ওয়ানডে খেলে তারা। কিন্তু স্পিনবান্ধব উইকেটে এর কোনোটিতেই তিন পেসার খেলায়নি। বেশির ভাগ সময় দুই এবং কখনো-সখনো একজন স্পেশালিস্ট পেসারও ছিলেন একাদশে। কাল মাশরাফি-শাহাদাতের পাশাপাশি শফিউল ইসলামও ছিলেন। কিন্তু ৮ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে সেটির যথার্থতা প্রমাণ করতে পারলেন কই শফিউল!