আনন্দে উত্তাল রাতের চট্টগ্রাম

মাঝে এক ম্যাচে শোচনীয় পরাজয়, তারপর আবারও জেগে উঠলো রাজপথ। শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টাইগারদের ২ উইকেটে জয়ের পর বাঁধভাঙা আনন্দে মেতেছে রাতের চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে আনন্দের বন্যায় ভাসলো পুরো দেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ইনিংসের ৪৯তম ওভারের শেষ বলে  মহ্মুদুল্লাহের  চার রান নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো এলাকা। অথচ ঠিক ৪৫ মিনিট আগেই দলে দলে স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন হতাশ দর্শকরা। আনন্দের খবরে স্টেডিয়ামে ফিরতে দেরি হয়নি তাদের। রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত স্টেডিয়াম ও আশপাশের এলাকায় শুধু মিছিল আর মিছিল। বিজয় বহরের প্রথম মিছিলটি বের হয় স্টেডিয়ামের মিডিয়াবক্স সংলগ্ন সেনবাড়ি সড়কের জেলে পাড়া থেকে। বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ ঢোল আর কাসার ঘণ্টা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিজয় উদযাপনে। তাদেরই দুজন বিনু রানী দাশ ও নিরু বালা দাশ ভোঁ দৌড়ে পৌঁছে যান স্টেডিয়ামের পশ্চিম ফটকে। বিনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের আঙ্গিনায় খেলে বাংলাদেশ জিতল, তাই খুব খুশি হয়েছি।" শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ঢোল আর কাঁসর ঘণ্টা নিয়ে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব সুরজা রানী দাশ। তিনি বলেন, 'সব মঙ্গল কামনায় ঢোল কাঁসা বাজানো আমাদের ধর্মীয় রীতি। তাই বাজাচ্ছি।" এই বাদ্যের সঙ্গে রাজপথ জুড়ে ছিল মাঠ ফেরত দর্শকদের উন্মাতাল নাচ। দেশের জয়ে আত্মহারা সায়েম স্টেডিয়ামের পূর্ব ফটকে দাঁড়িয়ে বললেন, "বাংলাদেশ দল জিতুক আর হারুক, আমরা তাদের সাথেই আছি।" এলাকার শিশুদের বিজয় উদযাপনের হাতিয়ার ছিল কুড়িয়ে পাওয়া ভুভুজেলা। সকালে স্টেডিয়ামে আসা দর্শকরা ভুভুজেলা নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারেননি। সেগুলো দখল করে রাতে পুরো স্টেডিয়াম এলাকা সরব করে তোলে তারা। আধ ঘণ্টার মধ্যে শহরের জিইসি মোড়, এনায়েতবাজার, চেরাগী পাহাড় মোড়, সিআরবি, ওয়াসার মোড়, টাইগার পাসসহ পুরো চট্টগ্রাম যেন মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সিআরবি, জিইসি মোড় ও হালিশহরের বিডিআর মাঠ এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি মোড়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বড় পর্দায় খেলা দেখানো হয়। বিডিআর মাঠ এলাকার দর্শক মো. মামুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখানে শুধুই বিজয় মিছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে পরাজয়ের পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। এমন জয়ের পর দ্বিতীয় রাউন্ড মনে হয় নিশ্চিত। খেলা দেখার আনন্দ থেকে বাদ যাননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। স্টেডিয়ামে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সদস্যদেরও বিজয়ের পর উল্লাস করতে দেখা গেছে। এপিবিএন'র সদস্য মইনুল, কিশোর, মিনহারা খেলার আপডেট শুনছিলেন দমকল বাহিনীর গাড়িতে থাকা রেডিওতে। বাংলাদেশ দলের চার উইকেট পড়ার পর হতাশ হয়েছিলেন তারাও। তবে বিজয়ের পর সবাইকে মিলেমিশে আনন্দ করেত দেখা গেছে। শুধু নগরীতে নয় জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও আনন্দ মিছিল বের হয়েছে। আনোয়া উপজেলার কাফকো আবাসিক এলাকার শিক্ষার্থী ইসমত জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখানে বিজয় মিছিল বের হয়েছে। কলোনির সব বয়সী মানুষ আনন্দ করছে। নগরীর জিইসি এলাকায় হোটেল পেনিনসুলায় রয়েছেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। উল্লসিত জনতা তাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের দর্শক-সমর্থকদের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। 
সুত্র :  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম