ভক্তরা ক্ষমা চাইলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ।

ক্রিকেট দলের ৫৮ রানের লজ্জাও মাথা পেতে নেওয়া যায়। তাই বলে কোনো একজনের ছোড়া একটা ঢিলের কলঙ্ক ও পুরো জাতিকে  বহন  করতে হবে ! ক্রিস গেইলের টুইটারের মাধ্যমে বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে খবরটা যেভাবে প্রচার  হয়েছে, তা কাটা গায়ে লবন  ছরানু  হয়েই এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের জন্য। ফয়সাল, ফাহিম, পারভেজ আর তাঁদের বন্ধুরা মিলে তাই কিছু একটা করতে চেয়েছেন। "লেট সে সরি টু আওয়ার গেস্ট" ফেইসবুকের মাধ্যমে এই অনুরোধ বা আমন্ত্রণটা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা ম্যাচের দিন রাতেই। কাল সকালে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই তরুণদের ২০-৩০ জনের একটা দল ফুল হাতে হাজির শেরাটন হোটেলের গেটে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের যাতে ক্ষতি না হয়, দেশের পর্যটন সম্ভাবনাটুকু যাতে মুছে না যায় মনের ভেতর এমন একটা আকুতিই সবার।ঢাকা ছাড়ার আগে ক্যারিবীয়রা তাই আরো একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে গেলেন। যাতে সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কা নেই, বিরূপ আচরণের বিড়ম্বনা নেই_আছে প্রাণঢালা ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব, আবারও জেনে গেলেন বাংলাদেশিদের আতিথেয়তার গল্পটাও মিথ্যে না। এক জনের ভুলে ক্ষমা চাইছে পুরো জাতি ড্যারেন সামিরা তখন লবিতেই, ইংরেজিতে লেখা প্ল্যাকার্ডের ভাষাটা বুঝতেও সমস্যা হওয়ার কথা না। তিনি আমাদের আবেদনটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, আমাদের দিকে তাকিয়ে হাতও নেড়েছেন। সিকিউরিটিকে পাঠিয়ে ফুলের তোড়াটাও নিয়েছেন। আমরা চাই বাংলাদেশ নিয়ে তাঁদের যেন কোনো ভুল ধারণা না থাকে, সারা বিশ্ব যাতে কোনো ভুল বার্তা না পায় ফোনে এভাবেই বলছিলেন ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করা ফয়সাল মাসুম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর এদিন হোটেল ছেড়েছে বাংলাদেশ দলও। ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছা বা শুভ কামনা জানাতে কেউ আসেননি। আসার কথাও না। নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেখে মনে হলো মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নায়করা যেন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছেন। টিম বাসে ওঠানো হয়নি ক্রিকেটারদের, তাঁদের তোলা হয়েছে ভারী পর্দা দিয়ে ঘেরা হোটেলের নিজস্ব মিনিবাসে। গ্রিনলাইন স্ক্যানিয়ার বিশাল বাসটা সামনেই থাকল, ডামি হিসেবে।
ক্রিকেটারদের অবস্থাও তাই। আগের সেই ফুরফুরে আমেজটা নেই কোথাও। যাঁর যাঁর মতো করে একে একে গাড়িতে উঠে এসেছেন, কোথায় দল, একেকটা যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এমন দুঃসময়ে অধিনায়কের ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাকিব আল হাসানের ভূমিকাটা জরিপ করা কঠিন হলো। লবি পেরিয়ে বড় বাসটার কাছে পৌছে  নিজের ব্যাগেজ গুছিয়ে দিয়ে মিনি বাসটায়ও উঠে পড়লেন কিন্তু কান থেকে ফোন সরালেন না। নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল, মিডিয়ার ব্যাপারে তো আরো, সাংবাদিকদের এড়াতেই হয়তো এ কৌশল নিয়ে থাকবেন অধিনায়ক। কিন্তু ভুলটা ভাঙল, মোবাইল কানেই সাকিবকে আবার বাস থেকে নেমে কিছুটা দূরে গিয়ে কথা চালিয়ে যেতে দেখে এ কথাগুলো বোধহয় সতীর্থদের সামনেও বলা যাচ্ছিল না। এটা হয়তো একটা বিচ্ছিন্ন ছবি, তবে এটাও তো ঠিক পুরো দলটাকে জাগিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জটা এখনই সবচেয়ে বেশি। সবার আগে এসে গাড়িতে ওঠা ওপেনার ইমরুল কায়েস অবশ্য একটা বাজে দিন ছাড়া কালকের ম্যাচটাকে বেশি কিছু ভাবতে নারাজ, এ ম্যাচটার কথা আমরা ভুলে যেতে চাই। চট্টগ্রামে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। কাল রাতে হোটেলে ফিরে আমি সকাল সকাল ঘুমিয়ে গেছি। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন সামনে তাকাতে হবে। সবাই আমরা এই মানসিকতা নিয়েই চট্টগ্রাম যাচ্ছি।এ চট্টগ্রাম যাত্রায় হোটেল থেকে টিম বাসে করে বিমানবন্দরে   পৌছেছেন
স্কোয়াডের ১২ জন। মাহমুদ উল্লাহ, শাহরিয়ার নাফীস এবং আবদুর রাজ্জাক বাসায় গিয়েছিলেন, এয়ারপোর্টে দলের সঙ্গে মিলেছেন তাঁরা বাসা থেকেই।